Hot Widget

6/recent/ticker-posts

টেকনিক্যাল অডিট _Technical Audit


Just passing the technical audit should not be our aim.
শুধু টেকনিক্যাল অডিট পাশ করা যেন আমাদের উদ্দেশ্য না হয়।
bestinfoqms.blogspot.com

টেকনিক্যাল অডিটের প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয়তা, শুদ্ধি অভিযান ও ডুকুমেন্টেশন প্রস্তুত করণ, আমাদের সকল করণীয়, শিক্ষণীয়, বর্জনীয় ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক কিছু নতুনভাবে শিখতে হয়েছে, নতুন আলোকে সাজাতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের এই আলোচনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে বাংলাদেশের সকল নামকরা প্রতিষ্ঠানে এই সকল কার্যক্রম সুষ্ঠ সুন্দর ভাবে চর্চা করা হয়। যদি না হয় তাহলে অবশ্যই আপনাদের শুরু করা উচিত। 

 তবে এককথায় যদি বলি তাহলে, অডিট করার আগে আমরা কারখানায় যে সকল প্রস্তুতি, বিশেষ পদক্ষেপ, শুদ্ধি অভিযান ও ডুকুমেন্টেশন প্রস্তুত করেছিলাম শুধু সেই সকল গুলো নিয়ে যদি কোন কোম্পানী একটু সচেতনতার সাথে এই কার্যক্রম গুলো চালিয়ে যেতে পারে, আমি হলফ করে বলতে ওই প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সন্তুষ্টি, কাজের মান উন্নয়ন, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, কর্ম পরিবেশ সহ অনেকগুলো উৎকর্ষ সাধিত হবে অনায়াসে। সকল ধরণের মূল্য সংযোজিত অর্ডার এবং নামকরা ব্র্যান্ডের কাজ করার জন্য শুধু এই নিয়মনীতি গুলো কঠোরভাবে পালন করলেই যথেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে। আর একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি তা হল ভাল একটা কিউএমএস টিম যদি আপনার কারখানায় থাকে তাহলে এই চর্চা গুলো সার্বক্ষণিক তদারকী করতে পারবে। আমাদের দেশের অনেক ভাল মানের কারখানায় এই টিমটার অনুপস্থিতি রয়েছে বলেই জানি।

আর একটা বিষয় উল্লেখ করতে হচ্ছে তা হল আমাদের দেশের অনেক কারখানাতেই এই ধরণের অডিট গুলো করে হয় শুধু পাশ করানোর জন্য। এই মানসিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের কারখানা গুলো এক্সপেন্সিভ অর্ডার এর যোগ্যতা সম্পন্ন না হওয়ার পিছনে এটা অনেক বড় একটা কারণ বলে আমি মনে করি।

আমাদের কারখানায় টেকনিক্যাল অডিটের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বিদেশী এক নামকরা ক্রেতা আমাদের সাথে কাজ করার আগেই এই অডিটের রিপোর্ট চেয়েছিলেন। আমরা সময় চেয়ে নিয়ে ছিলাম এবং বলেছিলাম যে আগামী মাসের ভিতর রিপোর্ট জমা করতে পারব। কিন্তু রিপোর্ট এর প্রস্তুতি নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম আমরা ভয়ানক ভাবে অনেক দূরে অবস্থান করছি। ওনাদের একজন প্রতিনিধির সাথে আগে থেকে পরিচয় ছিল জিজ্ঞাসা করলাম কোন ধরণের বিষয় গুলো নিশ্চিত করতে আপনার এই অডিটের ব্যবস্থা করতে বলেছেন। উনি কিছু বেশি শেয়ার করেছিলেন। সাধারণত গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানে বায়ারের টেকনিক্যাল অডিটের উদ্দেশ্য গুলো কি ধরণের হয় তা বলেছিলেন।

 🔹একজন ক্রেতা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ করতে গেলে তার জানা দরকার কিউ.এম.এস সিস্টেম ফাংশনাল আছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে তারা অর্ডার টা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেনা।  

 🔹অডিট কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম ঠিক রাখার ব্যাপার টা নিশ্চিত করতে চায় ।  

 🔹কাস্টমার তার নিজের কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে কমপ্লায়েন্স এর ব্যাপারটা তে পুরোপুরি নিশ্চিত করতে চায় । 

 🔹কাস্টমারের ম্যানুফ্যাকচারিং মেথডোলজি এবং সকল ধরণের প্রসেস কন্ট্রোলের চাহিদা গুলো নিশ্চিত করার ব্যাপারে এই অডিট দারুণ ভূমিকা রাখে। 

 🔹পোশাক কারখানায় সকল ধরণের ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে বেষ্ট প্র্যাকটিস গুলো চালু রাখা তাদের নিজেদের এবং উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠানের উভয়েরই মঙ্গল।

 🔹 প্রত্যেকটা পদক্ষেপের কার্যকারিতা, কর্মদক্ষতা, প্রত্যেকটা প্রসেসের উন্নতি এবং সর্বোপরি কাস্টমারের সন্তুষ্টির সকল দিক গুলো নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ গুলোর মূলত কোন বিকল্প নেই। 

🔹গ্রাহকের পণ্যের গুণগতমান ঠিক রাখা, সরবরাহকারী হিসাবে সুদূরপ্রসারী দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলতে অবশ্যই এর বিকল্প কোন পদ্ধতি নেই।  

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাহলে নিশ্চিত হতে পারি যে কোন ধরণের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য কিংবা গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোর জন্য টেকনিক্যাল অডিট নিজেদের প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ সাধনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে । বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড, রিটেইলার যে কোনো পোশাক কারখানায় তাদের অর্ডার দেওয়ার আগেই টেকনিক্যাল অডিট এর ব্যবস্থা করে থাকেন। আপনার কারখানার সক্ষমতা, পারদর্শিতা, দক্ষতা এবং বেস্ট প্রাকটিস গুলো প্রদর্শন করার এ যেন এক দারুণ পন্থা। আপনার বর্তমান ক্রেতা সমূহের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে ও উপরোক্ত চর্চা গুলো অবশ্যই আপনার প্রতিষ্ঠানকে আর এক দফা উন্নয়নে সাহায্য করবে। পুরো চর্চা টাকে শুধু যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের কালচারে রূপান্তরিত করে ফেলতে পারেন তাহলেই আর পিছনে তাকাতে হবেনা। 

টেকনিক্যাল অডিটের আওতার ভিতরে সাধারণত কোন বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে।  

 🔹যে কোন ধরণের কারখানার ব্যাসিক ফ্যাক্টরী প্রোফাইল।  

🔹কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম - কারখানার কোয়ালিটি ম্যানুয়াল, প্ল্যানিং এবং ম্যানেজমেন্ট রিভিউ।  

🔹রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট - হিউম্যান রিসোর্স, সকল ধরণের মেজারমেন্ট ডিভাইস গুলোর কেনাকাটা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয় সমূহ।  

🔹স্টক ম্যানেজমেন্ট - প্রোডাকশনের জন্য নিয়ে আসা কাঁচামাল এর সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা, প্রসেসের ভিতরের কি অবস্থায় থাকে এবং প্রস্তুতকৃত মালামাল সমূহের ব্যবস্থাপনা।   

🔹প্রোডাকশনের জন্য নিয়ে আসা কাঁচামাল সমূহের ইন্সপেকশন ব্যবস্থাপনা। 

🔹বিস্তারিত ভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়া যাচাই বাছাই - ওয়ার্ক শপ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভিতরে কিভাবে কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হচ্ছে এবং তা যথার্থ কি না ?

🔹শিপমেন্টের আগে প্যাকিংয়ের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কিভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্যাকিং লাইন কিভাবে সেট আপ করা হয়েছে।  

🔹কারখানার অভ্যন্তরীণ অডিট ব্যবস্থাপনা। তথ্য উপাত্ত ব্যবস্থাপনা। সকল কিছুর নির্ণয় করা, তদারকি করা, কিভাবে উন্নয়ন সাধন করা যায় তার ব্যবস্থা করা।

🔹এগুলোর বাইরে ও যদি মূল ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আরো কোন ধরণের নিদৃস্ট চাহিদা থাকে, সেই ভিত্তিক কাজ করার ব্যবস্থা করা।   

🔹টেকনিক্যাল রেডিনেস কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও রপ্তানী বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। 

আমরা প্রতিদিন এবং প্রতি ঘন্টায় যতটুকু প্রোডাকশন করি তার ১০% থেকে ২০% পর্যন্ত আমাদের নানা ধরণের টেকনিক্যাল ইস্যু, কোয়ালিটি ইস্যুতে প্রোডাকশন লাইনে ফিরতি কাজ করতে হয়, রিচেক করাতে হয়, রিপেয়ার করতে হয় তার মানে আপনি সপ্তাহে পাঁচ দিন মুলত প্রোডাকশন করেন আর একটা সারাদিন অযথা নষ্ট করেন শুধু রিপেয়ার করার কাজে। তার মানে ধরে নিতে পারি যে, প্রতিমাসে প্রতি লাইনে অন্তত চার দিনের প্রোডাকশন ব্যাহত করে ফেলছি নিজেদের নির্বুদ্ধিতার জন্য। এক বছরে ব্যাপারটা গিয়ে দাঁড়ালো ৪৮ দিনের প্রোডাকশন ব্যাহত হওয়ার মত ঘটনায়, মানে মোটামুটি দেড় মাসের প্রোডাকশন এর কালক্ষেপন হয় যাচ্ছে (সর্বোচ্চ) শুধু মাত্র আমাদের কিছু প্রিপারেশন না থাকার জন্য। টাকার অংকে কিন্তু আপনার ব্যবসায়িক টার্নওভার ও ১০% থেকে ২০% কমে যাচ্ছে শুধুমাত্র এই রেডিনেস না থাকার কারণে।

🔹সকল দিক থেকে টেকনিক্যাল নির্ভরযোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন কিভাবে আপনার লিড টাইম সংকুচিত করার কাজ করতে পারে। 

আমাদের লিড টাইমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রোডাকশনের সময়কাল। এবং সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ যে ব্যাপারটা, তা হল টোটাল লিড টাইমের শেষ প্রান্তে এসে আমাদের যখন কোন কিছু করণীয় থাকেনা ঠিক তখন আমাদের নাকে মুখে চেপে আসে সকল প্রকার অনিশ্চয়তা, সকল ব্যত্যয়, সকল ধরণের বাঁধা বিপত্তি। আমরা প্রতিনিয়ত অনির্ধারিত একটা সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়ি। প্রতিনিয়ত একই ধরণের অঘটন আমাদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম গুলোকে ব্যাহত করতে থাকে। আমরা নানা ধরণের টেকনিক্যাল বিপত্তির মাঝে ঘুরপাঁক খেতে থাকি। 

উপরোক্ত সকল কিছুই মূলত আমাদের পূর্ব নির্ধারিত সময় গুলোকে নষ্ট করে দিতে থাকে। আমাদের লিডটাইমের উপরে একটা আঘাত এসে পড়ে। আমরা প্রতিটা কাজের ডেডলাইন মিস করতে শুরু করি। আমরা অর্ডার টাকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প সকল ধরণের প্রচেষ্টা শুরু করি, তাড়াহুড়া করতে বাধ্য হই এবং উপায়ান্তর না দেখে ঝামেলা গুলোকে আরো পাঁকিয়ে তোলার জন্য সকল কিছু করতে থাকি। 

যদি আমাদের কারখানা বা টিম টেকনিক্যাল নির্ভরযোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে পারে অন্তত এই ধরণের শেষ মুহুর্তের ঝামেলা গুলো থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি আমাদের লিড টাইম কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। আর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই হল লিড টাইম সংকুচিত করার প্রথম পদক্ষেপ। কিছুদিন যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে প্রত্যেকটা টিএন্ডএ এবং ওয়েস্ট কে সংকুচিত করার ব্যাপারে আপনার টিম কে ডেডিকেটেড ভাবে কাজ করতে হবে। অবশ্যই আপনি তাহলে লিড টাইম ও সংকুচিত করে ফেলতে শুরু করবেন।

🔹টেকনিক্যালি সাউন্ড একটা কারখানার পরিবেশ সৃষ্টিতে কি ধরণের বাধা বিপত্তি আমাদের সামনে আসে। এই বাঁধা বিপত্তি গুলো থেকে উত্তরণের উপায় কি? প্রথমত সমস্যা গুলো কি ধরণের হয় তার আলোচনাঃ 

📍কোয়ালিটি মাইন্ডসেট থেকে আমরা প্রায় সকলেই অনেক দূরে অবস্থান করি। 

📍দরকার আপনার টিমের সদিচ্ছা ও পজিটিভ মানসিকতা।

📍আমাদের সকলের ভিতরে একটা দৃঢ় বিশ্বাস কাজ করে যে, কোন একভাবে শিপমেন্ট চলে গেলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। 

📍প্রোডাকশনের লোকজন কোয়ালিটি নিশ্চিত করার ব্যাপারটা কে কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব মনে করে।  

📍কোয়ালিটির শুরু হল অর্ডার প্রকিউর করার শুরুর দিন থেকে। তাই শুধু প্রোডাকশন এরিয়াতে কোয়ালিটির বিচার বিশ্লেষণ করে কোন ফায়দা হচ্ছেনা এই বিষয়টা আমরা বুঝে ও না বোঝার ভান করছি।  

📍আমাদের কারখানা ভেদে কোয়ালিটির লে-আউট কিছুটা তারতম্য হতে পারে। কিন্তু অনেক কারখানাতেই আমি কোয়ালিটির লে-আউট খুব ভুল ভাবে সাজানো দেখি। 

📍তুলনামূলক ভাবে কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টে স্বল্প শিক্ষিত লোকজনের আনাগোনা বেশি থাকে বলে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের মাতব্বরী কিছুটা তাদের মেনে নিয়ে চলা ফেরা করতে হয়।  

📍কোয়ালিটি, টেকনিক্যাল, মেইনটেন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এখনো তুলনামূলক ভাবে কম প্রায়োরিটি সম্পন্ন অবস্থায় আছে, তাই এই সকল কিছুতেই পুরো কোম্পানি জুড়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব কম বেশি সব সময় কাজ করে।   

উপরোক্ত সকল অব্যবস্থাপনা থেকে উত্তরণের উপায় কি? খুব সহজেই এর উত্তর দেয়া যাবেনা। পুরো ব্যাপারটা কে ঢেলে সাজানোর মত করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। খুব সুক্ষ পর্যালোচনা করে অনেক গুলো কাজ করতে হবে। 

📍একটা দারুণ টিম দরকার। 

📍দরকার আপনার টিমের সদিচ্ছা ও পজিটিভ মানসিকতা। 

📍সঠিক একটা নেতৃত্ব, আন্তরিকতা ও পরিপূর্ন গাইডলাইন। 

📍পুরো ব্যাপারটার একটা চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় গুলোর সঠিক ভাবে তালিকা প্রণয়ন। 

📍খুব ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়ে কাজগুলো অন্তত শুরু করা।

📍কিছু ভুল ভ্রান্তি হবে, কিছু ঝামেলা হয়ত বেড়ে যাবে। কিন্তু এই ঝামেলা মেনে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 

📍সাফল্য না হোক ছোট ছোট অর্জন গুলোকে সেলিব্রেট করতে শিখুন। প্রগ্রেস গুলোকে সুসংগঠিত করতে শিখুন। আমার কাছে সাফল্যের চেয়ে প্রতিনিয়ত ছোট ছোট উন্নয়ন গুলোকে বেশি কার্যকরী বলে মনে হয়। 

এখন পর্যন্ত আমরা টেকনিক্যাল অডিটের ব্যাপার গুলো কে তিন ভাবে ম্যানেজ করছি।  

🔹ইন্টারনাল অডিট অথবা ফাস্ট পার্টি অডিটঃ 

ইন্টারনাল অডিট অথবা ফাস্ট পার্টি অডিট ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট দ্বারা নির্ধারিত কারখানার অভ্যন্তরীণ এমপ্লয়ি অডিটর দ্বারা পারফর্ম করানো হয়ে থাকে। আমার কাছে সকল সময় মনে হয়েছে যে ইন্টারনাল অডিট গুলো কখনই কার্যকরী হয়না শুধুমাত্র ইন্টারনাল টিমের এমপাওয়ারমেন্ট না থাকার কারণে। খুব ছোট মাপের এমপ্লয়ী গণ এই অডিট গুলোর সাথে যুক্ত থাকেন। কারখানার জিএম ইডি লেভেলের বড় স্যারদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাদের মূলত এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলো করতে হয়। কোন কোন কারখানায় চোখ রাঙানি পর্যন্ত ব্যাপার গুলো গড়ায়। "তোমার পাখনা গজাইছে না, দাঁড়াও ছাটানোর ব্যবস্থা করছি" এই ধরণের হুমকি ধামকি তো নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। এই জন্যই এই ধরণের যে কোন অডিট মূলত প্রহসনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। আমরা কাস্টমার অডিটে গিয়েই ধরাটা কিন্তু ঠিকই খাচ্ছি। তখন কিন্তু সকল কিছু নিয়েই দৌড়াদৌড়ি করছি।    

 কারখানা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ইন্টারনাল অডিটরের প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে যতদিন পর্যন্ত টপ ম্যানেজমেন্ট টিম সিরিয়াস ভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা সম্পন্ন হবেন না, ততদিন মূলত কোন ধরণের সিস্টেম ওই কারখানায় দাড় করানো যাবেনা। যে কোন ধরণের ত্রুটি, বিচ্যুতি, ব্যত্যয় এর প্রতিবেদন গুলো যদি টপ-ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্য গণ সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেন এবং সেই অনুসারে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে আপনার কারখানার এসওপি কোনদিন ঠিক মত শেইপে আসবেনা। ইন্টারনাল অডিট আপনার উন্নয়নের পথে সব চেয়ে বড় নিয়ামকের দায়িত্ব পালন করতে পারে যদি আপনি ব্যাপারটা ঠিক মত উপলব্ধি করেন। আপনার নিজস্ব (অভ্যন্তরীণ) অডিট সিস্টেম দ্বারা কাস্টমারের জন্য গুণমান এবং প্রযুক্তিগত ইমপ্রুভমেন্ট গুলো দরকার শুধু আপনার কারখানার জন্যই।

🔹কাস্টমার অডিট অথবা সেকেন্ড পার্টি অডিটঃ  

ইন্টারনাল অডিট অথবা ফাস্ট পার্টি অডিটে যা কিছু ঝামেলা ছিল তার সকল কিছুই এই সময় এসে সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে, কারণ এই অডিট মূল ক্রেতার লোকাল বা ইন্টারন্যাশনাল টীম কর্তৃক সংঘটিত হয়ে থাকে। এই সময় আমাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মালিক পক্ষ, উর্দ্ধতন কর্মকর্তা গণ এবং সাধারণ কর্মচারী সকলে মিলেই এই সময় দারুন একটা টিম ওয়ার্কের মত কাজ করে। দারুন আন্তরিকতা পূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে পুরো কারখানা জুড়ে। সকলে মিলে ঘঁষামাজা, রাতজাগা, ডুকুমেন্টেশন প্রিন্ট দেয়া, একটা মাইক্রো নিয়ে এক্ষুনি ঢাকায় গিয়ে প্রিন্ট গুলো করে নিয়ে আসেন রে ভাই ইত্যাদি রকমের নানান প্রকার কার্যক্রম চোখে পড়বেই। তবে হাতে গোণা কয়েকটা কারখানার অবস্থা একটু ব্যতিক্রম আছে বৈকি, তাদের একটা ডেডিকেটেড টিম আছে এই সকল কিছু পরিপূর্ন ভাবে প্রস্তুত করে রাখাই ওই টিমের কাজ। এবং এই ভালোর মধ্যে বিদেশী মালিকানাধীন কারখানার আধিক্য কিন্তু বেশি।   

এই অডিট সংঘঠিত হয়ে গেলেই কারখানার মূল চিত্র টা সকলের দৃষ্টি গোচর হয়। যে রিপোর্ট বা ক্যাপ গুলো পাওয়া যায় সেগুলো থেকে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা যায়। সাধারণত স্কোরিং বা রেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়ে থাকে জন্য প্রত্যেকটা বিষয়ে একটা চুলচেঁড়া সমীক্ষা উপস্থাপন করা যায়। এবং আমরা সকলেই জানি যে কাস্টমার এই অডিট গুলো কারখানার সকল ধরণের রেডিনেসকে উজ্জীবিত করে রাখে।

🔹এক্সটার্নাল অডিট অথবা থার্ড পার্টি অডিটঃ 

থার্ড পার্টি অডিট হল একটি বহিরাগত টিমের অডিট যা মূল ক্রেতার নমিনেটেড এজেন্ট। সাধারণত বড় মাপের ব্র্যান্ড রিটেইলার কতৃক নিয়োগকৃত বা অনুমোদিত একটা চৌকষ টিম দ্বারা তাদের মত করে কারখানার প্রক্রিয়া, কোয়ালিটি বা গুনাগুন এবং প্রয়োজনীয় সকল ধরণের জিনিস পত্র যাচাই করে নেয় । থার্ড-পার্টি প্রতিষ্ঠান গুলো সকলেই আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ও দারুন মর্যাদা সম্পন্ন সব কোম্পানি বাংলাদেশ কাজ করছে। থার্ড পার্টি অডিটের সময় আমাদের কারখানার অবস্থা সত্যিই শোচনীয় আকার ধারণ করে। কারণ ক্রেতাদের অফিসের লোকজনের চেয়েও থার্ড পার্টি অডিটর গণের সকল কিছু সুক্ষ ভাবে চেক করার ক্ষেত্রে একটু বেশি সিরিয়াস থাকেন। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠানের একটা আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বহাল রাখতে হয় এবং দারুন প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে তাদের কাজ করতে হয়। তাই নিজের প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার খাতিরেই তাদের কাছে কোন ধরণের ছাড় আশা করা টা একটু অসাধ্য ব্যাপার। থার্ড পার্টি অডিটরের অডিটের জন্য আমরা কারখানা যেভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে, ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করে রাখি এই ভাবেই যদি বছরের বাকি দিন গুলোতে রাখতে পারতাম তাহলে আমাদের কারখানার সুনাম বিদেশী ক্রেতাগণের কাছে কাঙ্খিত একটি নাম হিসেবে প্রায়োরিটি পেত। থার্ড পার্টি টিমটা তাদের এই প্রতিবেদন নিদ্রিষ্ট সময় কাল উল্লেখ করে দাখিল করে থাকেন। এই মেয়াদ শেষে আবার এই অডিট সম্পন্ন করে আপডেট রাখতে হয়। এই অডিটের কিছু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সার্টিফিকেশন ও আছে। কারখানার দেয়ালে ঝোলানোর জন্যই এবং ওয়েবসাইটে তুলে দেয়ার জন্যই যেন আমাদের সকলের এত প্রচেষ্টা। 

 থার্ড পার্টি অডিটরের দাখিল কৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী যদি আপনার টেকনিক্যাল টীম, কোয়ালিটি টীম, প্রোডাকশন টিম, কিউএমএস টিম, এইচআর, এডমিন, কমপ্ল্যায়েন্স টিম একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করত তাহলে আপনার কারখানা ভূয়সী প্রশংসা কুড়াতে পারত। আমাদের দেশের হাতে গোনা ১৫/ ২০ টা কারখানা এই সারিতে আছেন। এবং বেশিরভাগই বিদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। থার্ড পার্টি টিমটা তাদের এই প্রতিবেদন নিদ্রিষ্ট সময় কাল উল্লেখ করে দাখিল করে থাকেন। এই মেয়াদ শেষে আবার এই অডিট সম্পন্ন করে আপডেট রাখতে হয়। এই অডিটের কিছু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সার্টিফিকেশন ও আছে। কারখানার দেয়ালে ঝোলানোর জন্যই এবং ওয়েবসাইটে তুলে দেয়ার জন্যই যেন আমাদের সকলের এত প্রচেষ্টা। 

🔹সাধারণত একটা পোশাক উৎপাদন কারখানার জন্য টেকনিক্যাল অডিট যে সব বিভাগ এবং যে সব বিষয়ের উপর করা হয় তার একটা তালিকা দেয়ার চেষ্টা করছি। 

১। কারখানার ওয়্যারহাউজ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ।  

২। ট্রিম এবং এক্সেসসরিজ সংরক্ষণ এর জায়গা টা। 

৩। ফ্যাব্রিক ইন্সপেকশন এর জায়গা টা। 

৪। ক্যাড সেকশন। 

৫। কাটিং ডিপার্টমেন্ট। 

৬। প্রি-প্রোডাকশন কার্যক্রম সমূহ। 

৭। ফিউজিং এর কাজ করা হয় যে জায়গাতে। 

৮। সুইং ডিপার্টমেন্ট। 

৯। ফিনিশিং ডিপার্টমেন্ট। 

১০। ফাইনাল ইন্সপেকশন করার জায়গা টা। 

১১। কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হয় কিভাবে। 

১২। প্যাকিং সেকশন / ফিনিশড গুডস এরিয়া। 

কারখানার ওয়্যারহাউজ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ এর কি অডিট করা হয় ।  

১। পণ্য সনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ফিফো-লিফো কোন মেথড ব্যবহারে করছি তার প্রমান । স্টোরেজ আইটেম ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা।

২। মোল্ড প্রতিরোধক ব্যবস্থা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা রিলেটিভ হিউমিডিটি পার্সেন্টেজ, এবং এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি সমূহ ।  

৩। প্যালেট বা তাক এর সঠিক ব্যবহার এর মাধ্যমে ট্রিম, এক্সেসসরিজ এবং ফেব্রিক স্টোরেজ করার ব্যবস্থাপনা।

No alt text provided for this image

আমাদের দেশের বেশিরভাগ কারখানায় একটা কমন সমস্যা হল ট্রিমস এক্সেসসরিজ ওয়ারহাউস অডিট হওয়ার আগে যে হযবরল অবস্থা থাকে। অডিটের পরে অবস্থা তার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করে। কোন ধরণের ম্যাটেরিয়াল খুঁজে বের করা আরো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ অডিটের আগে আমরা হঠাৎ করে ফাইভ সিস্টেম ( সেট, অর্ডার, শাইনিং, স্ট্যান্ডার্ডাইজ, সাস্টেইন ) বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠি। তাই সুন্দর করে সকল কিছু গুছিয়ে রাখতে গিয়ে কোন জিনিস কোথায় কিভাবে রাখছি তার কোন সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারিনা।  

আর একটা গোপন কৌশল আমাদের জানা আছে, তা হল অডিটের আগে ১০/১২ টা কাভার্ড ভ্যান ভাড়া করে এলোমেলো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অগোছালো সকল ম্যাটেরিয়াল কারখানার বাইরে একদিনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া। এই অডিট বাঁচাতে গিয়ে সকল ম্যাটেরিয়াল কে লেজেগোবরে করা ফেলতে আমরা খুব ওস্তাদ। এর পর সাতদিন ওই সকল কার্টুন খুঁজে কোন ধরণের মালামাল পাওয়া যায়না। সকলের ভোগান্তি বাড়ে। আমি জানিনা এর থেকে আরো বড় কোন গোপন কৌশল আপনাদের জানা আছে কিনা ?

এই সকল কিছুর হাত থেকে মুক্তির একটাই উপায় হল। ইন্টারনাল অডিট টিম কে শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা। ইন্টারনাল অডিট টিম এর কাজ কে প্রতিনিয়ত চর্চার মাধ্যমে কারখানার কালচারে রূপান্তরিত করা।   

ট্রিমস এবং এক্সেসসরিজ ইন্সপেকশনে কি ধরণের অডিট করা হয় : 

১। প্রতিটি রানিং স্টাইলের জন্য অনুমোদিত ও স্বাক্ষরিত ট্রিম কার্ড।

২। ইন্সপেকশন পদ্ধতি কি ফলো করা হচ্ছে এবং লাইটিং সিস্টেম টা কেমন।  

৩। রিজেক্ট আইটেম আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা, অবস্থানও ব্যবস্থাপনা কিভাবে করা হচ্ছে এবং সকল কিছুর জন্য আইসোলেটেড এরিয়া কিভাবে মেইনটেইন করা হয়।  

৪। থার্ড পার্টি বা সাপ্লায়ারের প্রদত্ত সমস্ত ট্রিমস এবং এক্সেসসরিজের অভ্যন্তরীণ টেস্ট রিপোর্ট ব্যবস্থাপনা।  

৫। খারাপ কাঁচামাল অথবা ইন্সপেকশনে ফেইলড প্রডাক্ট বা পণ্যের জন্য সাপ্লায়ারের কাছে অভিযোগ এবং রিপ্লেস ও ডকুমেন্টস দাখিল ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা কিভাবে করা হচ্ছে।





Thank you for reading this article, Please share this and support to my website grow further.

Post a Comment

0 Comments